কলকাতা 

অনলাইনে অর্ডার করলেই আপনার হেঁশেলে পৌঁছে যাবে ইলিশ, অভিনব উদ্যোগ রাজ্যের

শেয়ার করুন
  • 15
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

জামিতুল ইসলামঃ

বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার ইচ্ছা হলেই, অনলাইনে ফ্লিপকার্ট বা আমাজনে গিয়ে নিজের পছন্দের জিনিস অর্ডার করলেই, পৌঁছে যায় বাড়িতে। এবার একইভাবে আপনার হেঁশেলেও  পৌঁছে যাবে রুপােলি ফসল ইলিশ। শুনতে হয়তো সত্যিই অবাক লাগছে। ভাবছেন কী ভাবে সম্ভব ?
রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এবারে ইলিশ মরশুম শুরুর আগেই, সেই রকম ইন্টারনেট অ‍্যাপস বাজারে আনছে রাজ‍্য সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশন। প্রতি বছর ইলিশ মরশুম শুরুর সময় নানান সমস্যায় পড়তে হয় ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীদের। এক সঙ্গে প্রচুর ইলিশ আমদানি হলে মাছ মজুত রাখার অভাবে, ব্যবসার ক্ষতি করেও দালালদের বিক্রি করে দিতে হয় মাছ। এবার মৎস্যজীবীদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে, অভিনব এই উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার ও ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশন।
এক সময় ইলিশের বাজার পেতে রাজ্য সরকার নামখানা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার মৎস্যকেন্দ্র গুলিতে বহু টাকা ব্যয়ে হিমঘর তৈরী করেছিল। একসঙ্গে প্রচুর ইলিশ আমদানি হলে সেগুলি পচে নষ্ট না হয়ে যায়, তার জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছিল হিমঘর। হিমঘর গুলিতে ১৫০ টনের বেশি ইলিশ মাছ বা অন্যান্য মাছ মজুত রাখা যায়। তাতেও তেমন কিছু সুফল হয়নি। এবার মৎস্যজীবীদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে নামখানা, কাকদ্বীপ কিংবা ডায়মন্ড হারবার নয় সারা রাজ্যে যেখানে মাছ পাওয়া যায়, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়, সেই সব অঞ্চল গুলিতে ইন্টারনেটে মাছ বিক্রি করার ব্যবস্থা নিল রাজ্য সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশন। ভারতের যে কোন রাজ্যের, যে কোন জায়গা থেকে প্রয়োজন মত ইলিশ পাওয়া যাবে ইন্টারনেটে। আর এই খবর শুনেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে সরকারি প্রতিনিধি দল এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে, ইন্টারনেট ব্যবহারের পদ্ধতি জানতে। জানতে এসেছেন, কী ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, মাছ ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে।

Advertisement

এবিষয়ে রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বাংলার জনরবকে বলেন, এই জেলায় নদী বা সমুদ্রের ধারে বসবাসকারীরা বেশীর ভাগই মাছ ধরে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করেন। বিশেষ করে তাঁরা ইলিশ মরশুমে ইলিশ মাছই ধরেন। এক এক সময় প্রচুর ইলিশ জালে ধরা দিলে দেখা যায়, সেই মাছগুলি সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। সেই সময় ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীরা দালালদের খপ্পরে পড়ে কম দামে মাছ বিক্রি করে দেয়। মৎস্যজীবীদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে রাজ্য সরকারের সহযোগীতায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে হিমঘর তৈরী করা হয়েছে। এবার ইন্টারনেট অ‍্যাপসও তৈরী করা হল। এই অ‍্যাপসের ফলে মালিক ও ক্রেতাদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন হবে। আর যার ফলে মাঝখানে কোন দালাল চক্র থাকবে না। এই কারণে মৎস্যজীবীরা যেমন লাভ পাবেন, সেই রকমই ক্রেতারাও কম দামে মাছ পাবেন।
পশ্চিমবঙ্গ ইউনাইটেড ফিশারম্যান এ‍্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি ও উদ্যোক্তা সতীনাথ পাত্র জানান, বহুদিন ধরে রাজ্য সরকারের কাছে হিমঘর তৈরীর জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম। অবশেষে বহুদিনের সেই দাবি পূরণ হল। এবার মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন। এই ব্যবসার ক্ষেত্রে আরও একটা সুবিধা হল যে, ইন্টারনেট অ‍্যাপস আসার ফলে মৎস্যজীবীদের আর দালাল চক্রে পড়তে হবে না। সরাসরি ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন হবে। মাছের দাম ভালো পাওয়া যাবে। যার ফলে মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সমবায় সমিতির একটি প্রতিনিধি দল এরাজ্যে এসেছেন, কীভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাছ বাজারে বিক্রি হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে। প্রতিনিধি দলের আধিকারিক রবীন্দ্র নাথ বর্মন জানান, বাংলাদেশে ইলিশ সব থেকে বেশি পাওয়া যায়। অথচ বিক্রির ক্ষেত্রে নানান সমস্যা রয়েছে।শুনলাম এই রাজ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমুদ্রদের ইলিশ বিক্রি করা হবে। এই বিষয়টি জানার জন্যই এই রাজ্যে এসেছি। বিষয়টি বিস্তারিত জানার পর, সুফল পেতে বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। যাতে ক্রেতা ও বিক্রেতারা উভয়ই লাভবান হয়।


শেয়ার করুন
  • 15
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

14 − 3 =