প্রচ্ছদ 

তৃণমূলের সাত বছর বনাম মোদীর চার বছর,সার্বিক উন্নয়নের নিরিখে এগিয়ে মমতা

শেয়ার করুন
  • 22
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম

মে মাসের শেষ সপ্তাহ ছিল মমতা ও মোদী সরকারের  কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূলের মা-মাটি-মানুষের সরকার ২০১১ সালে ২০ মে প্রথম ক্ষমতায় আসে আর ২০১৬-র ২৭ মে রাজ্যে দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে ২০১৪ সালে বিজেপি দল একক গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। এই বছরের ২৬মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নরেন্দ্র দামোদর মোদী। সময়ের বিচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা-মাটি-মানুষের সরকার সাত বছর অতিক্রম করল,আর নরেন্দ্র মোদীর সরকার ৪ বছর মেয়াদ শেষ করল। এবার তুলনামূলক আলোচনা করে দেখা যেতে পারে সার্বিক উন্নয়নে কে এগিয়ে? ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত এরাজ্যের গরিব-মেহনতি-নিম্নবিত্ত ওনিম্ন-মধ্যবিত্তদের স্বার্থে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন।

Advertisement

মমতার উন্নয়ন মূলক কাজের বিস্তারিত প্রতিবেদন লেখা এই স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। তবু সংক্ষেপে বলা যেতে পারে বামেরা ৩৪ বছর ধরে গ্রাম-উন্নয়নে যা করতে পারেনি তা সাত বছরে মমতার প্রশাসন করে দেখিয়েছে। এটা বাস্তব হয়েছে এই কারণে যে কাজের ক্ষেত্রে মা-মাটি-মানুষের সরকার কোন বৈষম্য করেনি। মমতার তাবড় তাবড় সমালোচকরাও গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, পশ্চিমবাংলার উত্তর থেকে দক্ষিণ,পূর্ব থেকে পশ্চিম সর্বত্র উন্নয়নে ছোঁয়া পৌছে গেছে। তাঁর উন্নয়নকে কয়েকটি নিরিখে ভাগ করা যেতে পারে।

নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের উন্নয়নঃ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর প্রথম নজর দেন নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের সার্বিক উন্নয়নের দিকে। দু টাকা কিলো চাল থেকে শুরু করে রেশনিং ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছেন তিনি। চাল-গম থেকে শুরু করে আটা,ময়দা,সুজি,বেসন সহ সাধারন মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রগুলি কম দামে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। বিধবা ভাতা,বয়স্ক ভাতা,বেকার ভাতা,আইনজীবীদের ভাতা,স্কলারশিপ সব শ্রেনির ছেলেমেয়েদের জন্য চালু করা ইত্যাদি। এর ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে গরীব মানুষ।

কন্যাশ্রী প্রকল্প ঃ এই প্রকল্পটি সমগ্র দেশ তো বটেই বিশ্ব-মঞ্চে প্রশংসিত হয়েছে। এর ফলে স্কুল ছুট যেমন মেয়েদের কমেছে একই সঙ্গে পড়াশোনা করার প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাল্য বিবাহ রোধ করা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে। একটি মাত্র প্রকল্পের মাধ্যমে সমগ্র দেশে মমতা বন্দ্যোপধ্যায় নজীর সৃষ্টি করেছে।

কর্মসংস্থান ঃ বিরোধীরা কথায় কথায় এই সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকেন,এদের আমলে কর্মসংস্থান কোথায়? কিন্ত কেউ একটু খোঁজ নিয়ে দেখে না যে সাদা কথায় যে হোয়াইট কলার কর্মসংস্থানের বাইরে এক বৃহত্তর কর্মসংস্থান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমলে হয়েছে সেদিকে কারও নজর নেই। শুধু মাত্র সিভিক ভ্যালেনটিয়ার নেওয়া হয়েছে ১.৮০ লাখ। এটা বড় কর্মসংস্থান নয়। এদের হয়তো হাজার হাজার টাকা বেতন সরকার দেয় না। কিন্ত এরা সামাজিক মর্যাদায় বেঁচে থাকার সুযোগটুকু তো পেয়েছে। আর সরকারের হয়ে কাজ করার সুযোগ। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক সরকারি কর্মচারি নিয়োগেও এই সরকার যে অনেক মানুষকে চাকরি দিতে পেরেছে তা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। স্থায়ী চাকরির কথা বলা হচ্ছে,কিন্ত অনেক অস্থায়ী কর্মী যে নিয়োগ হয়েছে তা নিয়ে কিছু বলা হচ্ছে না কেন?

আর্থিক উন্নয়নঃ এই সরকারের আমলে রাজ্যের আর্থিক উন্নয়ন যে অনেকটা হয়েছে তা নিয়ে কারও কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। শুধু তাই নয়,বড় শিল্প হয়তো আসেনি,কিন্ত অনেক ছোট ছোট উদ্যোগপতি তৈরি হয়েছে। যাদের মাধ্যমে কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে রাজ্যের আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে।

অন্যদিকে মোদী সরকার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তার একটাও পূরণ করতে পারেনি। আচ্ছে দিনের স্বপ্ন আজ সাধারণ মানুষের কাছে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

সমগ্র দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টাঃ মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম দিন থেকেই দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।আখলাক আহমেদ থেকে শুরু করে সর্বত্র ধর্মের নামে মেরুকরণের চেষ্টা অব্যাহত। এদেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিশানা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা হয়েছে গত চার বছর ধরে।

আর্থিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে ঃ দেশের আর্থিক অবস্থা এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। মোদীজি কথা দিয়েছিলেন এক আর্থিক সমৃদ্ধি শালী ভারত তিনি দেশবাসীকে উপহার দেবেন। তা তিনি করতে পারেননি। বরং নোট বন্দী করে দেশের আর্থিক মেরুদন্ডকে ভেঙে দিয়েছেন। এই নোট বন্দীর কারণে ব্যাঙ্কগুলি দেউলিয়া হওয়ার পথে। আর্থিক ক্ষেত্রে এত বিপর্যয় এর আগে কোনদিন ভারতে ঘটেনি।

বেকারত্ব বেড়েছে ঃ মোদীজি দেশবাসী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় আসলে প্রতি বছর ২ কোটি বেকারের চাকরি হবে। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ তো দূরের কথা বরং নোট বন্দী করে আরও বেশি বেকার তিনি তৈরি করেছেন।

ব্যাঙ্কে টাকাও সুরক্ষিত নয়ঃ মোদী সরকারের দয়ায় এখন আর ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা রেখে মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না। জনগণের গচ্ছিত টাকা যেকোন দিন নীরব মোদী কিংবা বিজয় মালিয়ার মত মোদী ভক্তরা নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারে। আর এর দায় মেটাতে হচ্ছে সাধরণ মানুষকে। মানুষ ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে গেলে কর দিচ্ছে,তুলতে গেলে কর দিচ্ছে। আপডেট করতে গেলে কর দিতে হচ্ছে। যা মোদী জামানার আগে কেউ কল্পনা করতে পারত না।

গরীব-মধ্যবিত্তের সর্বনাশ,নীরবদের পৌষ মাসঃ মোদী সরকারের আমলে সবচেয়ে বড় আঘাত নেমে এসেছে গরীব-মধ্যবিত্ত সমাজের ওপর। এদেরকে সম্পূর্ণভাবে শোষন করে আম্বানী,আদানি,বিজয় মালিয়া,নীরব মোদীদের পাইয়ে দেওয়ার কাজটি খুব চুপিসারে করে চলেছেন মোদী সরকার।

মমতা আর মোদীর তফাৎ এখানেই মমতা গরীবের পক্ষে,মোদী ধনীদের পক্ষে। মমতা কৃষকের পক্ষে,মোদী কৃষিজমি দখলকারীদের পক্ষে। মমতা গ্রামীণ ভারতের উন্নয়নে মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান আর মোদী নীরবদের নীরবে এদেশের গচ্ছিত সঞ্চয়কে নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। মোট কথা সার্বিক উন্নয়নের নিরিখে মোদী তুলনায় কয়েক হাজার মাইল এগিয়ে মমতা।


শেয়ার করুন
  • 22
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

seventeen − 3 =