ইউএপিএ সংশোধিত আইনে অপব্যবহার হবে না ; সন্ত্রাসী সন্দেহে গ্রেফতার কোনো ব্যক্তি কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আবেদন জানাতে পারবে ; ৪৫ দিনের মধ্যে সেই আবেদনের নিস্পত্তি হবে রাজ্যসভায় জানালেন অমিত শাহ
বাংলার জনরব ডেস্ক : ইউএপিএ সংশোধনী বিলের উপর বির্তকে অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সব অভিযোগ খারিজ করে দেন অমিত শাহ । তিনি আজ রাজ্যসভায় এই বিলটি পেশ করেন । এরপর বিরোধী দলের নেতারা নানাভাবে তাঁকে প্রশ্ন করতে থাকেন । বিশেষ করে এই বিলটি আইনে পরিণত হলে তার অপব্যবহার হতে পারে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেন।
সংশোধিত বিলটি পাশ হয়ে আইনে পরিণত হলে, তার অপব্যবহার হতে পারে, সরকার বিরোধী যে কারও গায়ে সন্ত্রাসবাদী তকমা সেঁটে দেওয়া হতে পারে বলে শুরু থেকেই দাবি তুলছিল কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তাঁদের আশ্বস্ত করে শাহ জানান, সন্ত্রাসী সন্দেহে কোনও ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আবেদন জানাতে পারবেন তিনি। আবেদন হাতে পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে স্বরাষ্ট্র সচিবকে। এ ছাড়াও, দায়িত্বে থাকা অথবা অবসরপ্রাপ্ত এক জন বিচারপতি এবং অবসরপ্রাপ্ত দুই সরকারি সচিবকে নিয়ে কমিটি গড়া হবে। সেখানেও আবেদন পর্যালোচনা করে দেখার আবেদন জানানো যাবে।
কিন্তু তাড়াহুড়ো করে বিলটি পাশ করানো নিয়ে মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। বিলটিকে ঐতিহাসিক ভুল বলে উল্লেখ করেন তিনি। মাওবাদী সংযোগের অভিযোগে গত বছর গৌতম নাভলাখা-সহ পাঁচ সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। সেই প্রসঙ্গে টেনে চিদম্বরম বলেন, ‘‘দয়া করে হাফিজ সইদের সঙ্গে গৌতম নাভলাখার তুলনা করবেন না।’’
এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ‘‘সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম হয় না। সন্ত্রাসবাদীরা মানবতা বিরোধী। তাই তাদের বিরুদ্ধে কড়া আইনে সমর্থন জানানো উচিত আমাদের সকলের।’’ কোনও সংগঠনের বদলে ব্যক্তি বিশেষকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়ায় অমিত শাহের যুক্তি, ‘‘কোনও সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে, অনেক ক্ষেত্রে তার সঙ্গে যুক্ত সদস্যরা পরবর্তীকালে নতুন সংগঠন তৈরি করেন। তাই এমন সিদ্ধান্ত।’’
ঠিক কী ধরনের প্রমাণ হাতে পেলে এক জন ব্যক্তি সন্ত্রাসী কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত, সংশোধিত বিলটিতে তা স্পষ্ট করে বলা নেই। আবার কোনওরকম মামলা দায়ের না করেই কাউকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়া হবে কোন যুক্তিতে, তা-ও বলা নেই সবিস্তারে। এতে নাগরিক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হতে পারে বলে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। তা নিয়ে এদিন সংশোধিত বিলটিকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেন পি চিম্বরমও। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের মনে হলেই কাউকে সন্ত্রাবাদী ঘোষণা করে দেবে। এফআইআর, চার্জশিট, মামলা, শুনানির কোনও বালাই নেই। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে যে কাউকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করা হচ্ছে? শুধু মাত্র আপনাদের মনে হয়েছে বলেই!’’ এই বিলটির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন বলেও জানান তিনি।
এর জবাবে কংগ্রেসকেই তুলোধনা করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘জরুরি অবস্থার সময় কী হয়েছিল? সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। জেলে পোরা হয়েছিল সমস্ত বিরোধী নেতাদের। টানা ১৯ মাস গণতন্ত্রের অস্তিত্বই ছিল না। সেই আপনারা এখন আমাদের বিরুদ্ধে আইনের অপব্যাহারের অভিযোগ তুলছেন? তার চেয়ে বরং নিজেদের অতীতটা আর একবার ঝালিয়ে নিন।’’