জেলা 

“ সারা দেশ যে দিকে তাকিয়ে আছে, তাতে ছেলের অবদান রয়েছে এটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে ’’ চন্দ্রযান-২ সফল উৎক্ষেপণের পর চন্দ্রকান্তের মায়ের প্রতিক্রিয়া

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : ভারতে চন্দ্রযান গতকালই পৌছে গেল চাঁদে । কিন্ত এই চন্দ্রযান গড়ে তোলার পেছনে অবদান আছে হুগলীর গুড়াপের শিবপুর গ্রামের এক সন্তানের । চন্দ্রকান্ত কুমারে হাতে গড়ে চন্দ্রযান-২ । মোদী যখন চন্দ্রযান উৎক্ষেপণের কৃতিত্ব নিতে ব্যস্ত তখন নিরবে কাজ করে চলেছেন গুড়াপের সন্তান চন্দ্রকান্ত । কিন্ত গ্রামের মানুষ আবেগ বাধ ভাঙা হয়ে এগিয়ে এসেছে ।

অপেক্ষার ঘড়ি শূন্য ছুঁতেই সোমবার দুপুরে চন্দ্রযান পাড়ি দিল অন্তরীক্ষে। হাততালির ঝড় বয়ে গেল হুগলির গুড়াপের কুমারবাড়িতে।

Advertisement

এ দিন অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে কাউন্টডাউন শুরু হয়েছিল গুড়াপের শিবপুর গ্রামের কুমারবাড়িতেও। এই বাড়ির ছেলে চন্দ্রকান্ত কুমারের নাম জড়িয়ে ‘চন্দ্রযান-২’ অভিযানে। পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে সৌরমণ্ডল থেকে এই মহাকাশযান বার্তা পাঠাবে অভিযানের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) চন্দ্রকান্তের তৈরি সাতটি অ্যান্টেনার মাধ্যমেই।

গত ১৪ জুলাই প্রযুক্তিগত সমস্যায় বাতিল হয়েছিল অভিযান। সোমবার সকাল থেকে তাই চন্দ্রকান্তদের দোতলা বাড়িতে উৎকণ্ঠার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। বাড়ছিল আত্মীয়-পড়শিদের আনাগোনা। আসছিলেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও। সকলের চোখ আটকে টেলিভিশনের পর্দায়। উৎক্ষেপণ সফল হতেই চন্দ্রকান্তের বাবা মধুসূদনবাবু গ্রামবাসীদের সঙ্গে শিশুর মতো উচ্ছ্বাসে হাততালি দিয়ে ওঠেন। মা অসীমাদেবী কপালে হাত ঠেকিয়ে ধন্যবাদ দেন ঈশ্বরকে।

বেশ কিছু দিন আগে টিভি দেখার অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছিলেন চন্দ্রকান্তের বাবা-মা। সরাসরি উৎক্ষেপণ দেখার জন্য গত ১৪ জুলাই কেব্‌ল সংযোগ করেন। সোমবার উৎক্ষেপণের ঘণ্টাখানেক আগে চন্দ্রকান্ত বাবা-মাকে ফোন করে টিভি দেখার কথা বলেন। মধুসূদনবাবু বলেন, ‘‘আগের বার অভিযান স্থগিত হওয়ায় খারাপ লেগেছিল। এ বার উৎক্ষেপণের সময় যত এগোচ্ছিল‌ বুকের ধুকপুকুনি বাড়ছিল। শেষে সব ঠিকঠাক হওয়ায় দুর্দান্ত অনুভূতি হচ্ছে। উৎক্ষেপণের মুহূর্তে আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছিল।’’ অসীমাদেবীর কথায়, ‘‘ছেলে আর ঈশ্বরের উপরে আমার অগাধ বিশ্বাস। ছেলে সফল হবেই। সারা দেশ যে দিকে তাকিয়ে আছে, তাতে ছেলের অবদান রয়েছে এটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।’’

এ দিন গ্রামে মুখে মুখে ফিরেছে সাধারণ এক ছেলের বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার লড়াই আর তাঁর বাবা-মায়ের কৃচ্ছ্রসাধনের কাহিনি। চন্দ্রকান্তের যখন ছাত্রাবস্থা, গ্রামে মাটির রাস্তায় বর্ষায় চলাফেরা করা যেত না। আশপাশে শেয়ালের বসত ছিল। এমনই গ্রাম থেকে স্কুলের পাঠ চুকিয়ে বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন থেকে পদার্থবিদ্যায় বিএসসি অনার্স, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ‘রেডিয়ো ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স’ নিয়ে এমএসসি এবং এমটেক। মধুসূদনবাবুদের দু’টো টালির ঘর ছিল। আর ছ’বিঘা জমি। সেই জমি চষেই দুই ছেলেকে মানুষ করেছেন। পড়ার ফাঁকে চন্দ্রকা‌ন্ত চাষের কাজে বাবাকে সাহায্য করেছেন। তাঁর ভাই শশীকান্তও ইসরোর বিজ্ঞানী।

টিভিতে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ দেখার জন্য কাজে যাননি পাশের গ্রামের বাসিন্দা কেশবচন্দ্র কর্মকার। একাদশ শ্রেণির রিয়া দাস, বিএ পড়ুয়া স্বাতী পালরাও স্কুল-কলেজ কামাই করেছেন। সকলেই বলছেন, চন্দ্রকান্তের জন্য অখ্যাত এলাকা বিখ্যাত হল। চাঁদে অভিযানের ব্যাপারে প্রতিবেশী গৃহবধূ প্রিয়াঙ্কা দাসের তেমন ধারণা ছিল না। তিনিও এসেছিলেন কুমার বাড়িতে। বললেন, ‘‘এ বার চন্দ্রকান্ত বাড়িতে এলে এই বিষয়ে জানতে চাইব।’’

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

5 × one =