কলকাতা 

রাহুল যে পথ কংগ্রেস নেতৃত্বের সামনে খুলে দিয়ে গেলেন , নিজে পদ ছেড়ে দিয়ে যে বার্তা দিয়ে গেলেন তাতেই হয়তো কংগ্রেস আবার ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ পাবে : সর্দার আমজাদ আলী

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরি : রাহুল গান্ধী গতকাল স্পষ্ট দেশের মানুষের কাছে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আর কংগ্রেস সভাপতি পদে থাকবেন না । গত লোকসভা নির্বাচনে দলের বিপর্যয়কে সামনে রেখে তার সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ফল প্রকাশের দুদিন পরেই পদত্যাগ করেছিলেন রাহুল গান্ধী । অনেকেই তখন মনে করেছিলেন এটা শুধুমাত্র নিজের দায় ছেড়ে ফেলার জন্য রাহুলের কৌশল । কিন্ত না রাহুল তার ইস্তাফায় অনড় থেকে গেলেন । দলের মধ্যে থেকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বে তিনি সভাপতি পদে থাকতে রাজি হননি । তাঁর এই অনড় সিদ্ধান্তে নেপথ্যে কোন কারণ দায়ী তা নিয়েই আমরা কথা বলেছিলাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলীর সঙ্গে । তিনি বাংলার জনরবকে জানান , রাহুলের এই সিদ্ধান্তকে আমি সমর্থন করি । কারণ , ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচন ছিল একটা নীতি আদর্শের লড়াই । বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের লড়াই । আর সেই লড়াইয়ে রাহুল গান্ধী এককভাবে অংশ নিয়েছিলেন । একটা শতাব্দী প্রাচীন দলের প্রবীণ নেতারা যারা কংগ্রেস রাজনীতি করে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন , কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন তারা এই লড়াইয়ের রাহুলের সঙ্গে সাথ দেননি । তাঁরা যদি রাহুলের লড়াইকে সমর্থন করত তাহলে কংগ্রেসের এই বিপর্যয় হত না । শুধু প্রবীণরা নন , নবীন বা তরুণ নেতৃত্বও সেভাবে লড়াই করেনি ।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সাংসদ সর্দার আমজাদ আলী বলেন , ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদী বিরোধী মুখ ছিলেন রাহুল । কিন্ত তিনি দলের স্বার্থ সব সময় অগ্রাধিকার দিয়েছেন । একদিকে দল অন্যদিকে জাতীয় সংকট এই দুয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে রাহুলকে । মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকার । কমলনাথ মুখ্যমন্ত্রী । রাহুল কমলনাথের প্রতি আস্থা দেখিয়েছেন । কিন্ত ফল কী হল ? সদ্য কয়েক মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করেছে অথচ লোকসভায় মাত্র একটি আসন পেল । কেন ? শুধু মাত্র কমলনাথের পুত্র জিতল । এর দায় কার ? নিশ্চয় কমলনাথের । কিন্ত তিনি পদত্যাগ করবেন না । কারণ তাঁর কোনো দায় নেই ; কংগ্রেস সভাপতি রাহুলের সব দায় !

Advertisement

অন্যদিকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট । তিনি কয়েকমাস আগেই ক্ষমতায় এসেছেন । অথচ তাঁর রাজ্য থেকে একটি লোকসভা আসনও জিততে পারেনি কংগ্রেস । এমনকি অশোক গেহলটের পুত্রও কংগ্রেসের নিশ্চিত আসনে দাঁড়িয়ে হেরে গেছেন । এই লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভার মধ্যে গত বিধানসভাতে ৬টি পেয়েছিল কংগ্রেস । আর সেই নিশ্চিত আসনে হেরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর পুত্র । এর দায় কার ? এরও দায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুলের । অথচ মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস দল করছেন । তিনি একাধিকবার রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন , কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়েছেন । তারপরও নির্বাচনে পরাজয়ের দায় তিনি নেবেন না ! বরং উল্টো কাদা ছোঁড়াছুড়িতে ব্যস্ত । তাঁর ছেলের পরাজয়ের জন্য তিনি সরাসরি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সচীন পাইলটের দিকে আঙুল তুলেছেন ।

এক প্রশ্নের উত্তরে আমজাদ সাহেব বলেন , কংগ্রেস দল শুধু নয় , দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের সাফল্য নির্ভর করে যৌথ নেতৃত্বের উপরেই । কংগ্রেস তার ব্যতিক্রম নয় । রাহুল গান্ধী কংগ্রেসকে টেনে তোলার চেষ্টা করবেন আর অন্যরা ফায়দা লোটার জন্য থাকবেন তা হতে পারে না । মজার ব্যপার হল কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী পদত্যাগের পর প্রবীণ নেতারা কেউ এই বিপর্যয়ের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেননি । সুতরাং রাহুল গান্ধী বলতেই পারেন কংগ্রেস নেতৃত্ব কিংবা ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিক পরবর্তী কংগ্রেস সভাপতি কে হবেন ?

পদত্যাগ করে দায় এড়িয়ে যাওয়াটা কী পলায়নবৃত্তি মানসিকতা নয় ? এই প্রশ্নের উত্তরে আমজাদ সাহেব বলেন , ইন্দিরা গান্ধীর পৌত্র এবং সোনিয়া- রাজীবের পুত্র দায় এড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এটা ঠিক নয় । বরং দলের মধ্যে তিনি গান্ধী/ নেহেরু পরিবার বাদে অন্য নেতৃত্বকে সুযোগ করে দিলেন কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেওয়ার । যদি অন্যরা সফল হয় তাহলে এটা প্রমাণ হবে গান্ধী পরিবারকে বাদ দিয়ে কংগ্রেস টিকতে পারবে । আর যদি না হয় , তাহলে গান্ধী পরিবারের কোনো বিকল্প নেই এটা আরও একবার প্রমাণ হবে ।

দলের নবীন এবং প্রবীণ রাজনীতিবিদদের একটা শিক্ষা দিয়ে গেলেন রাহুল । তিনি বুঝিয়ে দিলেন , গদি আঁকড়ে থেকে লাভ নেই । বরং মানুষের জন্য কাজ করতে হয় । তিনি চেষ্টা করেছেন দেশকে সংকটের হাত থেকে মুক্তি দিতে তিনি পারেন নি । দেশের মানুষ তাঁর প্রতি আস্থা দেখায়নি । সুতরাং তিনি পদ আকঁড়ে থাকবেন না। এটা চিরন্তন কংগ্রেসী কালচারের বিরোধী মতকে তিনি দলের সামনে রাখলেন । আমি সভাপতি আমি পারিনি বলে সরে গেলাম । সুতরাং প্রবীন ও নবীন রাজনীতিবিদদের উচিত ছিল সেই পথ অনুসরণ করা ।

দেশের মানুষের কাছেও রাহুল গান্ধী বার্তা দিলেন , তিনি পদলোভী নন । আর পাঁচটা কংগ্রেস নেতার মত তিনি নন। তিনি যে নীতি আদর্শের কথা বলেছেন তা থেকে সরে আসবেন না ।

সর্দার আমজাদ আলী আশা প্রকাশ করেন রাহুল গান্ধী তাঁর শেষ বক্তব্যে যা বলেছেন , তা আমাদেরকে উপলদ্ধি করতে হবে । আগামী দিন দেশের সামনে সাম্প্রদায়িকতা হিংস্র রুপ নিয়ে সামনে আসছে । তার মোকবিলায় তৈরি হতে হবে কংগ্রেস নেতৃত্বকেই । কারণ বিজেপির বিকল্প দেশে আর কেউ নেই কংগ্রেস ছাড়া । রাহুল যে পথ কংগ্রেস নেতৃত্বের সামনে খুলে দিয়ে গেলেন , নিজে পদ ছেড়ে দিয়ে যে বার্তা দিয়ে গেলেন তাতেই হয়তো কংগ্রেস আবার ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ পাবে বলে আমজাদ সাহেব বিশ্বাস করেন ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

5 × 3 =