কলকাতা 

কাটমানি ফেরত দিন মমতার হুঁশিয়ারির পর আরও ভাঙনের পথে কী তৃণমূল ?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : লোকসভা নির্বাচনে দলের ফলাফল বিশ্লেষণের বৈঠকে বসে ১৮ জুন নজরুল মঞ্চে ।দলীয় কাউন্সিলদের এই সভায়  স্পষ্ট করে ধমক দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন কাটমানি নিয়ে থাকলে ফেরত দিয়ে দিন। কিন্তু এই ধমকেই  হিতে বিপরীত হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহল সূত্রে খবর । দলনেত্রীর কড়া পদক্ষেপ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ইন্ধন জুগিয়ে দিয়েছে মালদহ, বীরভূম-সহ একাধিক জেলায়। চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে খাস কলকাতাতেও। নেত্রীর মন্তব্যে ফাঁপরে পড়ে কাউন্সিলরদের অনেকেই বিকল্প পথের সন্ধানে। জানা গেছে , গত দু’দিনে অনেকেই যোগাযোগ করেছেন প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

দলের ভাবমূর্তি বা বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে? এই প্রশ্ন এখন খুব বড় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখার পরেই যে বিষয়টি নিয়ে বেশি করে ভাবতে শুরু করেছেন তিনি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে দিন পনেরোর ব্যবধানে হওয়া দুটো বৈঠকে। প্রথমে ফলাফল বিশ্লেষণের বৈঠক, তার পরে কাউন্সিলরদের সভা— পনেরো দিনের মধ্যে দু’বার কাটমানি নিয়ে দলীয় জনপ্রতিনিধিদের ধমক দিয়েছেন তিনি। আর ১৮ জুন কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তাঁর বিস্মিত প্রশ্ন— আবাসন প্রকল্প থেকে কেন ২৫ হাজার টাকা খেতে হবে? সমব্যাথী প্রকল্পের ২০০০ টাকা থেকে কেন ২০০ টাকা খেতে হবে? এই প্রশ্ন তুলেই থামেননি তৃণমূল চেয়ারপার্সন। যাঁরা কাটমানি নিয়েছেন, তাঁরা ফেরত দিয়ে দিন। দিয়েছেন এই রকম নিদানও।

Advertisement

রাজনৈতিক শিবিরের একটি অংশের ব্যাখ্যা, কাটমানি খাওয়ার প্রবণতার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত দিন পরে জানতে পারলেন, এমন নয়। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরে দলের জনভিত্তি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। সেই কারণেই তিনি ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করেছেন এবং সাধারণ নাগরিকের প্রাপ্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের ভাগ বসানোর প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রায় প্রকাশ্যে একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন।

কিন্তু রাজ্যে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটে গিয়েছে মে মাসেই। তাই দাঁতে দাঁত চেপে অস্বস্তি সহ্য করেও দলকে আঁকড়ে থাকতে অনেকেই আর রাজি নন। ক্ষোভের সেই চোরাস্রোতটা সবচেয়ে বেশি বইতে শুরু করেছে কলকাতাতেই।

১৮ জুন নজরুল মঞ্চে নেত্রীর ধমক খাওয়ার পর থেকে কলকাতার এক ঝাঁক কাউন্সিলর, বরো চেয়ারম্যান, মেয়র পারিষদ যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল এখনও ছাড়েননি শোভন। কিন্তু মন্ত্রিত্ব এবং মেয়র পদ ছাড়ার পর থেকে দলের কোনও কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেননি। তার পরেও অবশ্য দলের কিছু দায়দায়িত্ব নীরবেই সামলে যেতেন শোভন। কিন্তু সম্প্রতি সে সবও তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। শোভন বিজেপিতে যেতে পারেন বলে এই ক’মাসে একাধিক বার গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত দু’দিনে শোভনের কাছে এক ঝাঁক কাউন্সিলরের ফোন ঢোকার অর্থ কী, তা বুঝতে রাজনৈতিক শিবিরের অসুবিধা হচ্ছে না।

২০২০ সালে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক চিত্রটা যে রকম, তাতে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মঞ্চ বিজেপি-ই। লোকসভা নির্বাচনে কলকাতার দুই আসনের একটাতেও বিজেপি জেতেনি। কিন্তু ৫০টা ওয়ার্ডে তারা তৃণমূলের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি আর একটু বাড়তে পারলেই পুরসভার লালবাড়ির রং গেরুয়া হয়ে যেতে পারে। প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দলে টানা গেলে সে লক্ষ্যে পৌঁছনো যে আরও সহজ হবে, তা বিজেপি নেতারা বেশ বুঝছেন। ফলে শোভনকে টানার চেষ্টাও তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সেই যোগসূত্রের কথা কলকাতার কাউন্সিলরদের অনেকেরই অজানা নয়। অতএব আচমকা গুরুত্ব বাড়তে শুরু করেছে শোভনের।

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে , কলকাতা পুরসভা ভোটের আগেই তা তৃণমূলের হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভবনা আছে । ইতিমধ্যে মুকুল-শোভন বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে । আসলে নেত্রী সব জেনে বুঝেও এতদিন ধরে দলের কাউন্সিলার নেতাদের তোলাবাজি ও কাটমানিতে নিরবে মদদ দিয়েছেন তা এখন বন্ধ করতে গেলে হিতে বিপরীতে তো হবেই । এটাই স্বাভাবিক দস্তুর ।

 

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

eight + 9 =