কলকাতা 

রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে চলেছে বামেরা ; পুনরায় রাজ্য জুড়ে লাল ঝড় উঠতে চলেছে ?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : ২০১১ সালে জনতার রায়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশই শক্তি হারিয়েছে বামেরা । আর বামেরা যত দূর্বল হয়েছে ততই রাজ্য রাজনীতি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বিজেপি । কারণ রাজ্যের রাজনীতির সমীকরণে বিরোধী দলের মর্যাদা কংগ্রেস পেলেও জনসমর্থনের দিক থেকে এখনও বামেরা কংগ্রেসের চেয়ে অনেক এগিয়ে । এটা বাস্তব সত্য ! আর অর্থের প্রাবল্যে মিডিয়ার দৌলতে বিজেপিকে এই রাজ্যে মূল বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হলেও বাস্তবে বামেরাই হল এই রাজ্যে দ্বিতীয় শক্তি ।

১৯ জানুয়ারি শাসক দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকা ব্রিগেড সমাবেশে কয়েক লক্ষ লোকের জমায়েত নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । তাছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা এখনও এই রাজ্যে প্রশ্নাতীত । তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে ফেব্রূয়ারি মাসে বামেদের যে সমাবেশ ব্রিগেডে হয়েছিল তাতেও কয়েক লক্ষ লোকের জমায়েত হয়। ক্ষমতার মসনদ থেকে আট বছর সরে যাওয়ার পরও নিজেদের সাংগঠনিক ক্ষমতার জোরে এবং জনমোহনী কোনো নেতা নেত্রী না থাকা সত্বে এই জমায়েত প্রমাণ করেছে যে বামেরা এই রাজ্য থেকে একবারে ফুরিয়ে যায়নি ।

Advertisement

আসলে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সাংগঠনিকভাবে দক্ষ সিপিএম দল নতুন করে ভাবতে শুরু করে যে একটু চেষ্টা করলে , রুটি-রুজির লড়াইয়ে সামিল হলে তারও সাধারন মানুষের মধ্যে আবার আস্থা ফিরে পাবে । বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি যে আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে রাজ্যের মানুষ তাঁকে সমর্থন দিয়েছে তা মাত্র আট বছরের মধ্যেই সেই প্রত্যাশা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে । মমতা সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে বললে ভুল হবে না । শুধুমাত্র জনমোহনী শক্তি দিয়ে কিছুদিন ক্ষমতায় থাকা যায় , কিন্ত মানুষের পেটের টান পড়লে সেই সমর্থন আর থাকবে না । এই সহজ সত্য কথাটা উপলদ্ধি করতে পেরেছে সিপিএম । তাই তাদের পথ এখন রাস্তায় । যে ভুল করে তারা ক্ষমতা চ্যুত হয়েছিল সেই ভুল থেকেই নিজেদেরকে সংশোধন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে আলিমুদ্দিন ।

২০১৬তে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে তা হল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট । আর এই জোটের ফলে এই রাজ্যে কংগ্রেস বহুদিন পর বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে । স্পষ্ট করে বললে এটা স্বীকার করতে হবে যে , সিপিএম দয়ায় আবদুল মান্নান বিরোধী দলের নেতা হয়েছেন । বিজেপি বিরোধী মহাজোটে সামিল করতে চেয়েছিলেন সিপিএমকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী । তাই তিনি এই রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট করতে চেয়েছিলেন ।

কিন্ত কংগ্রেস নেতাদের কয়েক জনের ব্যক্তি স্বার্থের কারণে বিশেষ করে মহম্মদ সেলিমকে হারানো লক্ষ্যে সেই জোট ভেস্তে দেয় রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা । আর এরপরেই বামেরা সিদ্ধান্ত নেয় তারা একা লড়াই করবে । সিদ্ধান্ত ঠিক কী ভুল তা সময় বলবে ঠিকই । কিন্ত এটা মানতে হবে এই লোকসভা নির্বাচনে বামেরা বিশেষ করে সিপিএম দল সাধারন নজর কাড়তে সমর্থ হয়েছে । তাই এখন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে জয়ের আশা দেখছে সিপিএম । বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জিতবেন কী হারবেন তা যাদবপুরের মানুষ ঠিক করবে । কিন্ত একথা স্বীকার করতেই হবে যে যাদবপুরে সিপিএমের যে লাল জোয়ার এসেছে তা থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত আগামী দিন এই বাংলায় ফের আসছে বামেরা ।

রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সী যে জিততে পারবেন না তা এখন থেকেই বলে দেওয়া যায় । তবে সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম যে লড়াইয়ে থাকবেন তা কোনো রাজনৈতিক ভাষ্য্যকার অস্বীকার করতে পারবেন না । একইভাবে আসানসোলে গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জিও যে লড়াইয়ের ময়দানে মানুষের ভালো সাড়া পেয়েছেন তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না । পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি লোকসভা কেন্দ্রেই সিপিএমের তরুণ মুখ প্রার্থী । এর মধ্যে ইব্রাহিম আলী তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে যে লড়াইয়ের মধ্যে থাকবেন সেটা খোদ শাসক দলের নেতারাই স্বীকার করছেন । কাঁথিতে পরিতোষও ভাল সাড়া পাচ্ছেন । বর্ধমান দূর্গাপুরের প্রার্থী আভাষ রায় চৌধুরি ইতিমধ্যে মানুষের কাছে লালঝান্ডার পয়গাম পাঠিয়ে দিয়েছেন ।

সব মিলিয়ে বামেরা আবার নতুন করে জেগে উঠতে চলেছে । বাংলার মাটিতে বামেরাই আসল শক্তি এটা প্রমান করতে উঠে পড়ে লেগেছে সিপিএম । তবে আগামী ২৩ মে জানা যাবে বাংলার মানুষ লাল ঝড়ের আগমন কামনা করছে কিনা ।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

18 − 16 =