মধ্যরাতেই আছড়ে পড়বে বাংলায় ‘ফণি ‘; মোকাবিলায় তৎপর রাজ্য প্রশাসন ; খড়্গপুরে বসে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী
বাংলার জনরব ডেস্ক : শক্তিক্ষয় করে ওড়িশা থেকে এদিন মাঝরাত থেকে ভোররাতের মধ্যে বাংলায় আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় ফণী। ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিমি বেগে বাংলায় বয়ে যাবে ফণী। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১১৫ কিমি। শনিবার সন্ধেয় বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে যাবে ঝড়।
জানাল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এদিকে, ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড ওড়িশা। ঝড়ের হানায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। ওড়িশার বিভিন্ন প্রান্তে ভেঙে পড়েছে গাছ। পুরোদমে উদ্ধারকাজে নেমেছে ওড়িশা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাংলায় ঘূর্ণিঝড় আসছে। ওড়িশার মধ্য দিয়ে বাংলায় ঢুকবে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। আজ মাঝরাত থেকে ভোরের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে ফণী। ৪ তারিখ সকালে দুর্বল হবে ঘূর্ণিঝড়। এরপর সেদিন সন্ধে থেকে রাতের মধ্যে বাংলাদেশে যাবে ফণী’’। অর্থাৎ প্রায় ২৪ ঘণ্টা বাংলায় অবস্থান করবে ফণী।
পশ্চিমবঙ্গে ফণী পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে নবান্নে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। আগামী রবিবার পর্যন্ত ওই কন্ট্রোল রুম থেকেই পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ১২ ঘন্টার দুটি শিফটে এই কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকবেন একজন আইএএস অথবা ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ) পদমর্যাদার আধিকারিক। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্য সরকার বেশ কয়েকটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। এই নম্বরগুলি হল – ০৩৩ ২২১৪–৩৫২৬, ০৩৩ ২২১৪–৫৬৬৪, ০৩৩ ২২৫৩–৫১৮৫, ১০৭০ (টোল ফ্রি)। অন্যদিকে, খড়গপুরে থেকে গোটা পরিস্থিতি নজরে রাখবেন বলে জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফণী মোকাবিলায় তৎপর হয়েছে কলকাতা পুলিশও। সব ডেপুটি কমিশনার ও উচ্চপদস্থ অফিসারদের নিয়ে লালবাজারে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন নগরপাল রাজেশ কুমার। এই বৈঠকে ঝড়ের তাণ্ডব সামলাতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হোর্ডিং, ফ্লেক্স খোলা হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও এদিন বিভিন্ন পুরানো বাড়ি পরিদর্শন করেন । সেখান থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে । প্রতিটি বরো দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মেয়র পারিষদদের । কলকাতা সবচেয়ে উচুঁ আবাসন চৌরঙ্গী ৪২ থেকে বাসিন্দাদের নামিয়ে আনা হয়েছে। এই আবাসন খালি করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । সব মিলিয়ে রাজ্য প্রশাসন থেকে শুরু করে পুরসভা পর্য্ন্ত ফণী মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে ।
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের আশঙ্কায় এবার তৎপর হল কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঝড়ের দাপটে বিঘ্নিত হতে পারে মেট্রো পরিষেবা। বিশেষত, টালিগঞ্জ থেকে কবি সুভাষ ও দমদম-নোয়াপাড়ার মধ্যে ব্যাহত হতে পারে মেট্রো চলাচল। পরিস্থিতি অনুযায়ী, প্রয়োজনে বন্ধ রাখা হতে পারে মেট্রো চলাচল। কলকাতা মেট্রো রেলের তরফে এমনটাই জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, শিয়ালদা-ক্যানিং শাখায় ১৫টি লোকাল, শিয়ালদা-ডায়মন্ড হারবার শাখায় ১০টি লোকাল, শিয়ালদা-লক্ষ্মীকান্তপুর শাখায় ১৪টি লোকাল, শিয়ালদা-বারুইপুর শাখায় ২টি লোকাল, লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা শাখায় ১২টি লোকাল ট্রেন, শিয়ালদা/বারাসত-হাসনাবাদ শাখায় ১০টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ বদল করা হয়েছে।
এদিকে, ফণীর তাণ্ডবের আশঙ্কায় আগেভাগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সাউথ সিটি মল। শুক্রবার দুপুর ৩টের পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওই শপিং মল। যাদবপুর থানার তরফে একথা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানানো হয়েছে। সাউথ সিটির পাশাপাশি শহরের আরও একটি শপিং মল বন্ধ করা হয়েছে। ধর্মতলা চত্বরে বন্ধ রাখা হয়েছে সেন্ট্রাল। রাজারহাটের সেন্ট্রাল স্টোরও বন্ধ রাখা হচ্ছে।