জেলা 

বহরমপুরে অধীরের মূল প্রতিপক্ষ মমতা-শুভেন্দু ; ভোটের হাওয়ায় এখনও এগিয়ে অধীরই ; কঠিন লড়াইয়ে জনমানসে অধীরের অবস্থান কোথায় জানতে চান ? ক্লিক করুন ।

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : বহরমপুরের বিদায়ী সাংসদ অধীরের ভাগ্য পরীক্ষা আগামী ২৯ এপ্রিল । এদিন তাঁর কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে । অধীরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম তিনি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন । তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে হারানোর জন্য চেষ্টা করছেন । তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী আছে ঠিকই তবে মূল প্রতিপক্ষ হচ্ছে মমতা-শুভেন্দু । অপূর্ব সরকার নামে যিনি অধীরের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তিনি নাম মাত্র লড়াই করছেন । মূল লড়াই হচ্ছে মমতা বনাম অধীর । ভোটের দুদিন আগের হাওয়া বলে দিচ্ছে অপরাজেয় মমতা-শুভেন্দুর বিজয় রথ বহরমপুরে থেমে যেতে পারে । আর এটা কেমনভাবে সম্ভব তা একমাত্র অধীর চৌধুরিই জানেন ।

আসলে, অধীর রঞ্জন চৌধুরি মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের কান্ডারি শুধু নন , বাংলার কংগ্রেসের প্রধান মুখ বলা যেতে পারে । তিনি স্পষ্টবাদী । বামপন্থী রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন । সোমেন মিত্রের হাত ধরে কংগ্রেস রাজনীতিতে প্রবেশ । তারপরই বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রটি বামেদের হাত ছাড়া হয় । সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়ও বহরমপুরে প্রার্থী হয়েছিলেন । তিনি আশা করেছিলেন ,এই কেন্দ্রের সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটের সিংহভাগ পেয়ে জয়লাভ করবেন । তা হয়নি । তিনি হেরে গিয়েছিলেন । বামফ্রন্ট প্রার্থীর জয় ছিল এখানে নিশ্চিত ।

Advertisement

১৯৯৯ সালে বহরমপুরে প্রার্থী হলেন অধীর চৌধুরি । কার্যত বহরমপুরের জিতবেন এ আশা হয়তো দিল্লির কংগ্রেস নেতারাও  করেননি ।  অধীর জেল থেকে দাঁড়িয়ে নবগ্রাম বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন । আর বহরমপুরে প্রার্থী হয়ে বামেদের দূর্গকে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছিলেন অধীর চৌধুরি ।

 

তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি কংগ্রেসকে । সমগ্র মুর্শিদাবাদ জুড়ে কংগ্রেস নিজেদের আধিপত্যকে বজায় রেখেছিল ।পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা , বিধানসভা থেকে লোকসভা সর্বত্রই ছিল অধীরের দাপট । বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে অধীরকে সব রকমভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল আটকানোর । কিন্ত তিনি পারেননি । এমনকি পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগানো হয়েছিল । বামেরা তাঁকে কোনোভাবে জব্দ করতে পারেনি ।

কিন্ত ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর অধীরের ঘনিষ্টদের একের পর এক দলে টেনে কার্যত অধীরকে একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় । মুকুল রায় থেকে শুরু করে অভিষেক ও শুভেন্দু জুটি শাসক দলের প্রভাব খাটিয়ে অধীর সাম্রাজ্যে হানা দেন । চোখের সামনে থেকে হাতছাড়া হয়ে যায় পঞ্চায়েত-পুরসভা ও জেলা-পরিষদ ।

এর ঠিক এক বছর পরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে লোকসভা নির্বাচন । এই নির্বাচনই অধীরের কাছে সবচেয়ে কঠিন লড়াই । ঘরে-বাইরে তাকে লড়তে হচ্ছে । তবে তাঁর প্রতি জেলার হিন্দু-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের সহানুভূতি রয়েছে । এদিকে এক বছর ধরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত রাজে ক্রূদ্ধ হয়ে উঠেছে সাধারন মানুষ । তাদের দাবি অধীরের আমলে তো এরকম হত না । তাই অধীর জমি ফিরে পাচ্ছে । পাচ্ছে শুধু নয় , তাঁর জয় নিয়ে একশো শতাংশ  নিশ্চিত সাধারন মানুষ । আমরা বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম তাদের বক্তব্য অধীরের বিরুদ্ধে প্রার্থী কারা ?

তৃণমূল কংগ্রেস যাকে প্রার্থী করেছেন সেই অপূর্ব সরকার কি অধীরের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত ক্ষমতা রাখেন ? বহরমপুরের মানুষের প্রশ্ন পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে যারা দলত্যাগ করে অন্য দলের প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ক‘জনকে মানুষ পুনরায় নির্বাচিত করেছেন । আবদুর রেজ্জাক মোল্লা ও কাটোয়ার রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ জিতেছেন কি ? তাও রবিবাবু হারতে হারতে জিতে গেছেন । বহরমপুরের মানুষের প্রশ্ন মুর্শিদাবাদে কী শাসক দলের নিজস্ব কোনো নেতা নেই ? অপূর্ব সরকার, আবু তাহের এমনকি তৃণমূলের জঙ্গীপুরের প্রার্থীও এক সময় অধীরে কাছের লোক ছিলেন । অপূর্ব সরকার ও আবু তাহেরকে কংগ্রেসের অফিসিয়াল প্রার্থীর বিরুদ্ধে অধীর মনোনীত নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে এনেছিলেন অধীর ।

আর এরা যদি অধীরের  বিরুদ্ধে প্রার্থী হন তাহলে কী মানুষ এদের বিশ্বাস করবে ? এই প্রশ্ন করলেন বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা নুর হোসেন । তিনি নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন মুর্শিদাবাদের মানুষ সিরাজের প্রতি আস্থা এখনও রাখেন ; কোনো মীরজাফরকে প্রশয় দেন না । এই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদের সর্বত্রই । তাহলে কী এবারও বহরমপুরের বেতাজ বাদশা অধীর অজেয় হয়ে বিরাজ করবেন ? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ২৩ মে ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

twelve + 19 =